বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রতিবেদন :
বিশ্ব সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪২তম। তাহলে কোথায় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা? এই প্রশ্নটি প্রায়ই আমাদের মনে ঘুরপাক খায়। তবে এর প্রকৃত উত্তর কখনই পাওয়া যায় না। এই বিষয়ের প্রতিই আলোকপাত করে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড তাদের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলনে। আলোচনার বিষয় ছিল 'সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা'।
উক্ত আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মহম্মদ রুহুল কুদ্দুস, মাননীয় সাংসদ ও কলকাতার বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর এবং সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত। সভাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক দেবজ্যোতি চন্দ। সেখানে দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সেক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থা কী ভূমিকা পালন করে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
একটি সংবাদ মাধ্যম ঠিক কীভাবে পরিচালিত হয় তা ব্যাখ্যা করে আলোচনার সূত্রপাত করেন স্নেহাশিস সুর। তথ্যের অধিকার আইন (আর টি আই) এবং গোপনীয়তার অধিকার আইন (রাইট টু প্রাইভেসি) প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁর আলোচনায়। একজন সাংবাদিকের সূত্রের গোপনীয়তার রক্ষার দায়ভারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্নেহাশিসবাবু বলেন, কোনো সাংবাদিক কর্মক্ষেত্রে কোনো গুরুতর বিপদে পড়লে তার একমাত্র পথ বিচার ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মহম্মদ রুহুল কুদ্দুস মূলত বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে সম্পূর্ণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি 'ফ্রিডম অফ স্পিচ' এর কথা বলেন। এছাড়া তিনি সংবাদপত্র প্রকাশ ও পরিচালন ক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন এবং সাংবাদিকের যে কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে লেখার ক্ষমতার উপর আলোকপাত করেন। সাংবাদিকতা মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার কিনা সেই প্রশ্ন তুলে নিজের বক্তব্য শেষ করেন বিচারপতি কুদ্দুস।
সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত পুরো বিষয়টিকে গত এক বছরে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে আলোচনা করেন। সেই আলোচনায় উঠে আসে মণিপুর, বিবিসির ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে তৈরি একটি ডকুমেন্টারি এমনকি অরুণাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর আত্মহত্যার প্রেক্ষাপট। এখানেই তিনি এক ছাত্রের একটি প্রশ্নের উত্তরে বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, একটি স্বনামধন্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক কোনো মামলায় দ্রুত বিচার পায়। কিন্তু একটি ছোটো প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক ততটা দ্রুত বিচার ব্যবস্থার সহযোগিতা পায় না।
'আমরা জানি, ভারতের সংবিধানে 'ফ্রিডম অফ স্পিচ অ্যান্ড এক্সপ্রেশন' থাকলেও 'ফ্রিডম অফ প্রেস'এর কথা আলাদাভাবে বলা নেই,' এমন মন্তব্য করে আলোচনা শুরু করেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি 'ফ্রিডম অফ প্রেস' বলতে বর্তমানে 'ফ্রিডম অফ ক্যাপিটালিস্ট'কে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বহু সংখ্যক ব্যক্তি স্বাধীনভাবে অনলাইন পোর্টাল চালাচ্ছে। বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, "পুঁজি নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমই সাংবাদিকের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে"।
বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রতিবেদন:
বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর উদ্যোগে আয়োজিত, ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলন’-এর দ্বিতীয় দিনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি আলোচনা চক্রের বিষয়বস্তু ছিল লিভারের চিকিৎসা। এই আলোচনা চক্রের প্রধান অতিথি এবং বক্তা ছিলেন ডা. অশোকানন্দ কোনার। লিভার বা যকৃতের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাঁরাই মূল অংশগ্রহণকারী হিসাবে এই আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা চক্রটির পৌরহিত্য করেন পিয়ারলেস হাসপাতালের মুখ্য প্রশাসক ডা. সুজিত করপুরকায়স্থ।
ডা. কোনার এই আলোচনাচক্রের শুরুতেই অ্যালকোহলিক লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও ওবেসিটি নিয়ে আলোচনা করেন। অ্যালকোহলিক লিভারের ব্যাপারে তিনি বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এটি হতে পারে। এর প্রতিরোধের উপায় হিসেবে তিনি মদ্যপান না করার, বা মদ্যপানের পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেন। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও ওবেসিটি-র জন্য অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবারকে দায়ী করেন ডা. কোনার। তিনি বলেন, ভারতে বর্তমানে প্রায় ২৫%-৩০% মানুষ ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ওবেসিটি-তে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় সেই অর্থে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব হয় না।
এরপর ডা. কোনার হেপাটাইটিসের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, জন্ডিস থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে না পারলে, পরবর্তীকালে 'হেপাটাইটিস-এ'-তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও 'সাধারণ শৌচাগার' ব্যবহার, অপরিশুদ্ধ জল পানের ফলেও 'হেপাটাইটিস-এ' হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই রোগ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে জন্ডিসের সঠিক চিকিৎসা, 'সাধারণ শৌচাগার’ ব্যবহারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা, পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সতর্ক থাকা, জল পরিশোধন করে পান করা, ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তোলার উপরে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 'হেপাটাইটিস-বি' প্রসঙ্গে ডা. কোনার বলেন, ভারতবর্ষে প্রায় ৩% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, এবং তাদের হেপাটাইটিস-এর 'ক্যারিয়ার' বা 'বাহক' বলা হয়। এটি কোনো উপসর্গ ছাড়াই হতে পারে। আলসার, ক্যান্সার এবং হার্নিয়া-র মতো সংকটজনক রোগ পর্যন্ত 'হেপাটাইটিস-বি' আক্রান্ত রোগীর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। যদিও 'হেপাটাইটিস-বি'-এর ভ্যাকসিন জন্মের পর থেকেই শিশুদের দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও যারা ওবেসিটি-র সাথে 'হেপাটাইটিস-বি'-তে আক্রান্ত, তাঁদের ডা. কোনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। 'হেপাটাইটিস-সি' নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে 'হেপাটাইটিস-সি' সংক্রামিত হতে পারে। যদিও ভারতে খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যেই 'হেপাটাইটিস-সি' দেখা গেছে।
ডা. কোনার আরও জানান, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নাল অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে কেমিস্ট-কে বলে ওষুধ কিনে খাওয়ার যে প্রবণতা (যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অল্টারনেট মেডিসিন’ বলা হয়) দেখা দিয়েছে, তার ফলে বিভিন্ন 'ক্রনিক লিভার ডিজিজ' দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, এই প্রবণতার ফলে, বিশেষ করে করোনাকালের পর থেকে, বিহার এবং বাংলায় বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এটি প্রতিরোধের উপায় হিসেবে তিনি জানান, প্রত্যেকের যতটা সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ীই ওষুধ খাওয়া উচিত। এছাড়াও ডা. কোনার জলবাহিত রোগ নিয়ে আলোচনা চক্রে উপস্থিত সকলকে সচেতন করেন। অপ্রতুল নিকাশি ব্যবস্থা এবং পানীয় জলের সুব্যবস্থার অভাবের ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা, এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই রোগে আক্রান্ত হন। এছাড়াও, গর্ভবতী মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হলে তার ফলাফল মারাত্মক হতে পারে, এমনকি তাদের গর্ভের শিশুর অথবা তাদের নিজেদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এর প্রতিরোধের উপায় হিসেবে তিনি পরিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা এবং নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করে তোলার বিষয়ে মানুষকে উদ্যোগী এবং সচেতন হতে বলেন।
এরপর আলোচনা চক্রে চলে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়। এই পর্বে ক্যান্সার স্পেশালিস্ট ডা. মধুছন্দা গায়েন প্রশ্ন রাখেন, “ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই প্যান-৪০, রেনট্যাক ইত্যাদির মতো ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?” ডাঃ কোনার বলেন, এই মেডিসিনগুলি আপাতভাবে নিরাপদ হলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হয়। এগুলির অতিরিক্ত সেবনের ফলে গ্যাসট্রিক ক্যান্সার এবং পেটে টিউমার হতে পারে। এছাড়াও যাদের হার্নিয়া বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদেরকে এই মেডিসিনগুলি ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ডা. কোনার। তিনি ‘রান্টিডাইন’ ওষুধটি প্রেসক্রাইব করে বলেন গ্যাসের এই ওষুধটি, অন্যান্য গ্যাসের ওষুধের তুলনায় বেশি নিরাপদ। দর্শকদের মধ্য থেকে শৈলেশ্বর ভট্টাচার্য্য, পীত্ত লবণ বা বিলিরুবিনের ব্যাপারে ডা. কোনার-কে জিজ্ঞেস করেন। ডা. কোনার বলেন, ডিরেক্ট বিলিরুবিনের পরিমাণ ০.৩ মি.গ্রা./ডেসি.লি. থাকলে সেটা স্বাভাবিক, এবং বিলিরুবিন স্বাভাবিক রাখার জন্য বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই প্রশ্নোত্তর পর্বের সমাপ্তির সাথেই এই আলোচনা চক্রেরও পরিসমাপ্তি ঘটে।
বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রতিবেদন:
বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর উদ্যোগে আয়োজিত, তৃতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের একটি আলোচনা চক্রের বিষয় ছিল আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ক্যান্সার সচেতনতা, তার প্রতিরোধ ও মোকাবিলাকে ঘিরে। এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন লন্ডন প্রবাসী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ এবং বিশিষ্ট অঙ্কোলজিস্ট ডা. মধুছন্দা কর।
এই আলোচনা চক্রে তাঁরা প্রথমে ক্যান্সার কী, এবং এই রোগ কিভাবে শরীরে সঞ্চারিত হয়, তা ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও ক্যান্সারের বিভিন্ন প্রকারভেদও তাঁরা বর্ণনা করেন। বিশেষত পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সার ও মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের কথা তাঁরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ক্যান্সার যে নিরাময়যোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য, এই বিষয়টি তাঁরা উপস্থাপন করেন।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ তুলে ধরেন। ফুসফুস, যকৃত ও মুখে হওয়া ক্যান্সারের মূল কারণ হিসেবে ধূমপান, মদ্যপান, ও তামাক সেবনকে তুলে ধরেন ডা. মধুচন্দা কর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ও প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়, এই বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
এরপর সভাকক্ষে চলে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-পর্ব। এই পর্বে তাঁরা, তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা ও ক্যান্সার সংক্রান্ত নানান প্রশ্ন চিকিৎসকদের জানান, এবং চিকিৎসকরাও যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন।
এই আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন এক প্রবীণ ক্যান্সারবিজয়ী। তিনি তাঁর ক্যান্সার বিজয়ের কাহিনী এই আলোচনা চক্রে বর্ণনা করেন। তাঁর কিডনি থেকে লিভার পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরেও, ডা. মধুচন্দা কর এবং অন্যান্য চিকিৎসকদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় তিনি আজ সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর ক্যান্সার বিজয়ের কাহিনী এবং এক সুস্থ জীবনের বার্তা নিয়ে এই আলোচনা চক্রের সমাপ্তি ঘটে।
Previous
Next